ভালোবাসার অনেকান্ত

ভালোবাসার অনেকান্ত

না-পাওয়ার রঙ নাও তুমি

পিকু

অর্কর বয়স তখন দশের কাছাকাছি।

সেজমামি এসেছে। মা আর মামি কথা বলছে খাটে বসে। অর্কর একটা স্বভাব – হাঁ করে বড়োদের গল্প শোনা। শুনতে শুনতে অর্ক একটু একটু করে মায়ের গা ঘেঁষে বসে। আরও একটু পরে মাকে জড়িয়েও ধরে।

“উফফ। সর না। গায়ে ছাগলের মত গন্ধ”, মায়ের গলায় বিরক্তি।

অর্ক সরে যায়। চুপ করে যায়।

আর কোনওদিন মায়ের কাছে যাওয়ার ভুলটা করেনি অর্ক।

অর্কর বয়ঃসন্ধি কিছুটা আগেই এসেছিল। ক্লাস ফাইফ-এ। শিশু যে আদর পায় অর্ক যেন হঠাৎই তার যোগ্যতা হারিয়েছিল। আর বড়রা যে সম্ভ্রম পায় অর্ক যেন তারও যোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি তখনও। বয়ঃসন্ধির এই মাঝামাঝি অবস্হানটা বড়ই বিড়ম্বনার। অর্ক একইসাথে না-শিশু না-প্রাপ্তবয়স্ক। মা-ও অর্কর বড় হয়ে ওঠাটাকে মেনে নিতে পারেনি।

… আবার বছর কুড়ি পরে, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন, ভূমধ্যসাগরের তীরে, অর্ককে ছুঁয়ে যায় মুখে গলায় গালে। ভালবাসার যৌথখামারে। সে রাতে ব্যাবিলন মেসপটেমিয়ায় মিশরে অনেক অনেক বৃষ্টি পড়েছিল। অর্ক আর বনলতা বলেছিল না-বলা অনেক কথা। রাত শেষ হওয়ার কিছু আগে রাত শেষ হওয়ার কিছু পরে হয়ত বা লাল-সাগর হয়তবা কৃষ্ণ-সাগরের গভীর নির্জন হৃদয় হতে ভেসে এসেছিল এক নারীর অস্ফূট স্বর “তোমার ছোঁয়া আমার প্রাণের পরশ”।

অর্ক নিরাময় হয় সে রাতে।

ধুয়ে যায় শরীরী আত্মসংশয়।

এ প্রথম কেউ কাছে ডেকেছিল।
এ প্রথম কেউ ভালোবেসেছিলো।

অর্কর ক্ষমতাকে নয়, অর্কর অক্ষমতার অণু পরমাণুগুলোকে।

অর্কর জমা-খাতাকে নয়।
অর্কর খরচের-খাতাকে।

অর্কর পাওয়াগুলোকে নয়।
অর্কর না-পাওয়ার রঙ-তুলিকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *